🏵️নাভিপদ্ম 🏵️

🪷🪷🪷

নাভিকমল দর্শন🪷🪷🪷

একবার স্বামী বিশুদ্ধানন্দ পরমহংস বাবা কাশীতে পুরাতন আশ্রমেতে হনুমান ঘাটে অবস্থান করার সময় সকাল প্রায় ৮টায় আমরা ৪/৫ জন উপস্থিত ছিলাম; আমাদের সৎসঙ্গ পৌরাণিক বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ ছিল এবং নানারূপ বাক্যালাপ চলার সময় একব্যক্তি বলিয়া উঠিলেন, —‘পুরাণেতে বহু অলৌকিক এবং অবিশ্বাস্য কথার উল্লেখ আছে যাহা কোন প্রকারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, —যেমন দৃষ্টান্তস্বরূপ

বিষ্ণুর  নাভি-কমল হইতে ব্রহ্মার উৎপত্তি, এসব কল্পনা ও রূপক ভিন্ন আর কিছুই নয়।'

এই কথা বাবা শুনিয়া বলিয়া উঠিলেন, ‘যাহা বা যে বস্তু তোমাদের বুদ্ধির অগোচর বা তোমাদের জ্ঞানের বাহিরে, তাহাকে অস্বীকার করিও না। তোমাদের বা অনেকের জ্ঞানের বা দর্শনের বাহিরও অনেক বস্তু আছে।' পরন্তু সত্য বস্তু সত্যই থাকিয়া যায়; —নাভিকমল ছিল এবং তাহা এখনও আছে। ঐ ব্যক্তি বলিলেন—নাভি কমল আমি কখনও দেখি নাই বা কেহ দেখিয়াছে বলিয়াও শুনি নাই।’ ‘এমনকি বিজ্ঞানবিদ্‌ কোন ডাক্তারেরা ইহা কখনই স্বীকার করিবে না বা মানিবে না।' তখন বাবা কহিলেন, –‘তোমাদের ডাক্তার কতটুকু জানে? দেহতত্ত্ব অত্যন্ত গভীর। তাই, যদি তোমরা নাভি-কমল দেখিতে ইচ্ছা প্রকাশ কর তবে দেখাইতে পারি।'

এইরূপ বলিয়াই তাকিয়াতে হেলান বা ঠেস দিয়া নিজের নাভি প্রদেশ খুলিয়া দিলেন এবং উহার উপর নিজের হাত বুলাইতে লাগিলেন—প্রথমে নাভি প্রদেশে একটি গভীর খাদের সৃষ্টি হইল—তারপর রক্তিমবর্ণ হইয়া গেল—কিছুক্ষণ পরেই ১/, ফুট লম্বা একটি সুগন্ধ যুক্ত কমল বাহির হইল। উহার সুগন্ধতে সারা ঘর সুবাসিত হইয়া গেল, তাহা দেখিয়া আমরা সকলেই মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় বসিয়া রহিলাম। তখন বাবা বলিলেন—‘এ সময় সূর্য্যের তেজ অধিক নহে, তাই আর বড় হইবে না, নচেৎ ছাদ পর্য্যন্ত বড় হওয়া সম্ভব ছিল

।” কিছুক্ষণ পর ঐ নাভি-কমলটি সংকুচিত হইয়া নাভি প্রদেশে পুনরায় প্রবেশ করিল। তারপর বাবা বলিলেন—নাভিতে এই প্রকার কমল, রক্ত, নীল ও শ্বেতবর্ণের অসংখ্য আছে।'

শাস্ত্র কিছুই মিথ্যা নয়; প্রয়োজন হইলে হৃদপদ্মও একদিন বাহির করিয়া দেখাইয়া দিব। নাভিকমলের বর্ণ যেমন লাল সূর্য্যের ন্যায় রক্তিমাভাযুক্ত, হৃদয় কমল সে প্রকার নহে। প্রত্যেকটি কমলই বাহির করা যায়। এসব তর্কের বা অনুমানের বিষয় নহে। প্রত্যক্ষ সত্য।”

ঋষিগণের বাক্যতে বিশ্বাস রাখা একান্ত প্রয়োজন; সাধ্য-সাধন ও যোগ্যতা অনুসারে সকলই সম্ভব। যাহা একজনের নিকট অসম্ভব উহা যোগ্য বা অধিকারী ব্যক্তির নিকট সহজসাধ্য। শাস্ত্র ও গুরু বাক্য কখনই ভুল নয়; যোগা ও সামর্থ্যবানের দ্বারা প্রত্যক্ষানুভূতি হওয়া সম্ভব। কোন ঋষি বাক্যই অসত্য নয়। —সাধারণ লোকের কাছে বা তাহাদের সীমিত জ্ঞানের জন্য অবিশ্বাস্য হইতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীর কাছে উহা সহজসাধ্য।